পৃথিবীর দেশ গুলির মধ্যে ভারত হলো এমন একটি দেশ যেখানে বাঘ, এশিয়াটিক সিংহ ও চুষার চিতা, চিতা বাঘ ও - বৃহৎ বন্য বেড়াল এই চার ধরনের প্রজাতির দেখা মেলে। প্রথম তিনটির সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রচুর আলোচনা দৃষ্টিপাত করা হলেও তুষার চিতা প্রতি এখনো সঠিক ভাবে নজর দেওয়া সম্ভব হ্যা ওঠেনি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো এরা এমন দুর্গম পার্বত্য স্থানে বসবাস করে যেখানে এদের খবুজে পাওয়ায় দুঃসাধ্য। হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে এদের বসবাসের জায়গা। খুব সহজে ের দৃষ্টি গোচর হয় না। যদিও বা চকিতে এদের দেখা পাওয়া যায়, এরা অনায়াসে দ্রুত সকলের নজর এরিয়া যেতে পারে। এই বিশেষে চারিত্রিক বৈশিষ্ঠীর কারণেই এদের সম্পর্কে জানা এবং এদের সংরক্ষণ করা বিশাল করা বিশাল কঠিন হ্যা উঠেছে।
তুষার চিতা হিমালয়ের গভীর পার্বত্য অঞ্চলের প্রাণী। মদ্যপ এশিয়া এখনো এদের কিউ সংখ্যায় পাওয়া যায়। রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া থেকে শুরু করে চীন, তিব্বতেও এদের দেখা যায়। ভারতবর্ষে হিমাচল-প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখন্ড, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশে এদের বৃষ্টিতে লক্ষ করা গেছে। প্রধানত পার্বত্য অঞ্চলে এদের প্রিয় বসবাসের জায়গা। তবে শীতে তীব্র ঠান্ডায় এরা পার্বত্য অঞ্চল থেকে নিম্ন্ন ভূমি তে উঠে আসে। গোটা পৃথিবীতে এদের বাসস্থান এতটা বৃস্তিত হলেও বাস্তবে উপরিউক্ত দেশ গুলির খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে এরা থাকে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে এদের বৃস্তিতির বৃহৎ অঞ্চল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডতে পরিণত হয় এদের জীন গত বৈচিত্ৰ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নতুন ভিন্ন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটেছে বলে গবেষকরা মনে করেছেন।
আকারে ও চাল চলনে এরা চিতা বাঘের তুলনায় অনেক ভিন্ন প্রকৃতির। মাঝারি আকৃতির এই প্রাণীটির হালকা সাদাটে ধূসর রঙের হয়ে থাকে এবং বাদামি বা হলুদ ছোপ দেখা যায়। কখনো কখনো পেটের দিক সাদা রঙের হয়। এদের ওজন প্রায় ৩০- ৫৪ কেজি মধ্যেই হয় এবং দেহে পশমের মতো বর বর লোম থাকায় তীব্র পার্বত্য শীত থেকে রক্ষা পায়। এদের মাথা তা দেহের তুলনায় ছোট ও গোলাকার। কান দুটোও ছোট ছোট। লম্বা রোমশ লেজ তা দৈর্ঘে প্রায় ৯০cm এবং ইটা অমসৃণ পাথুরে অঞ্চলে চলাফেরা করার সময় দেহের ভারসাম্য রক্ষণ করে। এদের পা দেহের তুলনায় ছোট। সামনের পা দুটো লম্বায় ছোট এবং থাবাটা বর আকৃতির যাতে এরা সহজে বরফের উপর দিয়ে হাটতে পারে। এদের লোমশ পা গুলো তুষারাবৃত অঞ্চলে জুতোর মতো কাজ করে। এদের পিছনের পা কিছুটা লম্বা, তাই খুব সহজেই এরা লাফাতে পারে। প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত এরা লাফাতে পারে।
এরা মাংসাশী প্রকৃতির জীব। সাধারণত নীলচেসারসের , পাহাড়ি আইবেক্স এদের প্রধান খাদ্য হলেও এদের খাদ্য তালিকায় পাখি , খরগোশ জাতীয় ছোট ছোট প্রাণীরাও রয়েছে এবং প্রয়োজনে এরা শরীরের তিনগুন বেশি ওজনের প্রাণীকেও মেরে ফেলতে সক্ষম। সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী একটি জাতীয় উদ্যানে এক বছর একটি তুষার চিতা ৫টি নীলচে ভেড়া, ৯তে খরগোশ, ২৫টি মারমেট, ৫টি গৃহপালিত ছাগল, ১টি ভেড়া, ১৫টি পাখি মেরে খেয়েছিলো।
স্বভাবে লাজুক প্রকৃতির হওয়ায় এরা কম দৃশ্য ম্যান হয়। এমনকি পাহাড়ের অধিবাসীরাও এদের খুব কম সময় দেখতে পান। এরা নিশাচর প্রকৃতির প্রাণী,প্রধানত ভোর বেলা ও বিকেল বেলা ও সন্ধ্যায় এরা বেশি দৃশ্যগোচর হয়। কারণ এই সময়ই তারা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে এদের তেমন ভাবে আর দেখা যায় না। মানুষ জনের আধিক্য এরা একদম পছন্দ করে না। তাই মতের ওপর কম জন বসতি পূর্ণ্য অঞ্চলে এরা ঘোরা ফেরা করে। কখনো কখনো মানউশের উপস্থিতি তে এরা বিরক্ত ও বাধ্য হয়ে নিশাচর হয়ে ওঠে বেশ গভীর রাতে জনশূন্য অঞ্চলে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ায়। এরা সচরাচর মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। তবে প্রজনন কালে এবং শাবক দেড় রক্ষা করার উদ্দেশ্য এরা আক্রমণ প্রবন হয়ে উঠতে পারে। মানুষের হাতে আক্রান্ত হলে এরা আক্রমণ কারীর ক্ষতি করার চেয়ে নিজের আত্ম রক্ষা কেই শ্রেয়া বলে মনে করে। তাই আক্রমণের মুখোমুখি হলে এরা সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরা যেমন 'মিউ' শব্দে ডাকতে পারে, তেমনি আবার কখনো কখনো প্রয়োজনে 'হিস্-হিস্' শব্দও ও করে থাকে। এছাড়া এরা নাসা রন্ধ্র দিয়াও একটি বিশেষ আওয়াজ করে থাকে। তবে এরা গর্জন করতে পারে না। ঈদের নাসা রন্ধ্র টি খুবই প্রসারিত- মূলত পার্বত্য শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যেই এই অভিযোজন।
একক ভাবে বসবাস করায় এরা দুর্রত্ত্বে থেকে বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে নিজের এলাকা নির্দেশ করতে পারে। নিজের উপস্থিতি চিহ্নিত করার জন্যই এরা পিছনের পা দিয়ে মাঠি খুঁড়ে মাটির স্তুপ তৈরি করে প্রয়োজনে এরা এদের মূল-মূত্র কেও সংকেত হিসাবে ব্যবহার করে। অন্নান্ন প্রাণীর মতো নিজের এলাকা নির্দেশ করার জন্য এরাও প্রস্রাব করে। এবং এর গন্ধ ছড়িয়ে দেয়। সাধারণত একে অপরকে খুঁজে পেতে এবং আক্রমণ এরিয়া যাওয়ার জন্য এরা এই সংকেত গুলো ব্যবহার করে থাকে।
শীতের শেষ ভাগ এদের প্রয়োজন কাল। এই সময় এরা বিশেষভাবে ডাকতে পারে। এদের প্রজোযন কাল অল্প সময় এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই এক বছরে এরা দ্বিতীয় প্রয়োজনের জন্য সঙ্গী খোঁজে না। প্রায় ৯০-১০০ দিন স্ত্রী তুষার চিতার গর্ভাবস্থা চলতে থাকে। এই কারণেই মোটামুটি এপ্রিল থেকে জুনের মাঝে মাঝি এরা প্রসব করে। পাহাড়ে সাধারণত পাথরের ফাটলে এদের বাছা গুলো জন্মায়। একবারে এরা একটি থেকে পাঁচটি বাছা প্রসব করে রথাকে। সদ্যোজাত বাছা গুলোর জন্মানোর পর চোখ ফোটে না। তবে দেহ বোরো পশম যুক্ত লোমে ঢাকা থাকে। জন্মানোর পর এক একটি বাছার ওজন ৩২০-৫৬৭ গ্রাসের মধ্যে হয়। জন্মানোর প্রায় ৭ দিন পর এদের চোখ ফোটে এবং ৫ সপ্তাহ পর এরা হাঁটতে শেখে। জনবাবস্থায় শাবকগুলো দেহের চামড়ায় কালো কালো ছোপ থাকে যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাদামি বা হলদেটে রঙ এ পরিণত হয়। ২-৪ মাস বয়স হলে এরা এদের জন্মস্থান ত্যাগ করে। ৪ মাস বয়স পর্যন্ত মা-তুষারচিতা বাচ্ছাদের পরিষ্কার করা ও খাওয়ানোর সমস্ত রকম দায়িত্ব পালন করে। ১৮-২২ মাস পর্যন্ত এরা এদের মায়ের সাথেই থাকে। তবে খাবার জোগাড় করা ও আত্মরক্ষার ব্যাপারে সক্ষম হয়ে উঠলে এরা শিকারের জন্য বাসস্থান থাকে দূরে চলে যায়। এরা প্রায় ২-৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং প্রায় ১৫ - ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচে।
তুষারচিতার সংখা দিন দিন কমে যাওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এদের বসবাসের অঞ্চল কমে যাওয়া এবং মানুষের নানা ধরণের উৎপাত। মানুষের বাসস্থানের প্রয়োজন দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এরা এদের বাসস্থান হারাচ্ছে, ফলে এরা বাধ্য হয়ে মানুষের বাসভূমিতে চলে আসছে এবং গৃহপালিত পশু মেরে ফেলছে। কখনো কখনো এদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। তাই গ্রামবাসীদের হাতে এরা নিস্তার পায়না -মর্মান্তিকভাবে এদের মৃত্যু ঘটে। চাষের পরিমান বেড়ে যাওয়ার জন্য চাষজমির ক্রমাগত বৃদ্ধি তৃণভূমি অঞ্চলের কমে যাওয়ার প্রধান কারণ , যার ফলে অঞ্চলের তৃণভোজী প্রাণী যেমন , বন্য ভেড়া , ছাগল এদের খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে এবং খাদ্যের অভাবে এদের সংখ্যাও ক্রমাগত কমতে থাকছে , যা পরোক্ষভাবে তুষারচিতার অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও ঐতিহ্যগত প্রথা মেনে এদের দেহের হাড়সহ অন্যানো অংশ ভিভিন্ন পোকার চীনা ওষুধ তৈরির কাজে লাগানোর অপচেষ্টাও এদের চরম বিপদ ডেকে আনছে। তাই, এদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার একমাত্র কারণ হলো মানুষ। আইনে বন্য প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও তুষারচিতা নিধন বন্ধ হয়নি , নির্বিচারে চোরাশিকারিদের হাতে এদের হত্যা চলছেই। সুন্দর লোমে ঢাকা চামড়ার জন্যও এদের মানুষের হাতে মরতে হয়। এদের চামড়ার বাজারদর অস্বাভাবিক বেশি হওয়ায় চোরাশিকারিদের মধ্যে এদের চামড়া সংগ্রহের উদ্দেশ্য এখনো তুষারচিতা নিধন চলছে। তাই ক্রমশ এরা বিপন্ন প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে এবং হয়তো একদিন পৃথিবী থেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আগেই বলা হয়েছে যে , তুষারচিতা প্রজাতিটি খুবই কম হওয়ায় এদের বর্তমান অবস্থা সংকান্ত গবেষণা করা খুবই কঠিন হয়ে উঠেছে , আর এই কারণেই এদের সংরক্ষণ করা ততটাই সমস্যাজনক। তবুও পারিশেস এ একথাই বলতে পারি , নির্বিচার অযৌক্তিক কারণে তুষারচিতা নিধন বন্ধ হলে এবং নিযন্ত্রিত পরিবেশদের প্রজননের বিগ্ন না-ঘটলে অন্যান্য প্রাণীদের মতো এরাও বেঁচে থাকতে পারবে। সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী দার্জিলিং চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গুত্তম থেকে কালিংপং যাওয়ার পথে তিনমাইল এলাকায়তাপকেদারার তুষারচিতা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি অভয়ারণ্য তৈরি হতে চলেছে। এশিয়ায় এই প্রথম কৃত্রিমভাবে শিকার ধরা শেখানোর জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য বন দফতর। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে যাতে এরা টিকে থাকতে পারে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশবিস্তার করতে পারে , তার জন্যই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শিকার পদ্ধতি শিখে নেওয়ার পর এদের ছেড়ে দেওয়া হবে সতিকরের জঙ্গলে।
হাজার হাজার বছর ধরে চরম দুর্গম ও বিপদসঙ্কুল অঞ্চল আ বিচরণ করা সত্বেও এদের কখনো বিপদের মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু , শুধুমাত্র মানুষের সচেতনতার অভাবে এবং সামান্য কিছু শখ মেটানোর উদ্দেশ্যে আজ তুষারচিতা সেই বিপদর সামনে। এদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলের সর্বপ্রথম স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র হত্যা নিষিদ্ধকরণ করলেই প্রাণী সংরক্ষণ সম্ভব নয় , তাকে সঠিক পথে বাস্তবায়িত করাই আমাদের কর্তব্য। আমরাই পারি প্রকৃতিকে তার সম্পদ ফিরিয়ে দিতে। এই সমস্ত প্রচেষ্টার মূল লক্ষ হলো, প্রকৃতিতে জীববৈচিত্র টিকিয়ে রাখা। তাই, মানুষকে পৃকৃতি সম্পর্কে সচেতন করতে না-পারলে, তারা ক্রমশ জীবজগৎ সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়বে। যার পরিণতি শুধুমাত্র তুষারচিতার বিলুপ্তিই নয়, সমগ্র জীবজগৎও ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এরকম আরো আর্টিকেল পড়ার জন্য ফলো করুন আমাদের ব্লগার পেজ। ফ্রি তে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube চ্যানেল.
তুষার চিতা হিমালয়ের গভীর পার্বত্য অঞ্চলের প্রাণী। মদ্যপ এশিয়া এখনো এদের কিউ সংখ্যায় পাওয়া যায়। রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া থেকে শুরু করে চীন, তিব্বতেও এদের দেখা যায়। ভারতবর্ষে হিমাচল-প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখন্ড, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশে এদের বৃষ্টিতে লক্ষ করা গেছে। প্রধানত পার্বত্য অঞ্চলে এদের প্রিয় বসবাসের জায়গা। তবে শীতে তীব্র ঠান্ডায় এরা পার্বত্য অঞ্চল থেকে নিম্ন্ন ভূমি তে উঠে আসে। গোটা পৃথিবীতে এদের বাসস্থান এতটা বৃস্তিত হলেও বাস্তবে উপরিউক্ত দেশ গুলির খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে এরা থাকে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে এদের বৃস্তিতির বৃহৎ অঞ্চল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডতে পরিণত হয় এদের জীন গত বৈচিত্ৰ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নতুন ভিন্ন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটেছে বলে গবেষকরা মনে করেছেন।
আকারে ও চাল চলনে এরা চিতা বাঘের তুলনায় অনেক ভিন্ন প্রকৃতির। মাঝারি আকৃতির এই প্রাণীটির হালকা সাদাটে ধূসর রঙের হয়ে থাকে এবং বাদামি বা হলুদ ছোপ দেখা যায়। কখনো কখনো পেটের দিক সাদা রঙের হয়। এদের ওজন প্রায় ৩০- ৫৪ কেজি মধ্যেই হয় এবং দেহে পশমের মতো বর বর লোম থাকায় তীব্র পার্বত্য শীত থেকে রক্ষা পায়। এদের মাথা তা দেহের তুলনায় ছোট ও গোলাকার। কান দুটোও ছোট ছোট। লম্বা রোমশ লেজ তা দৈর্ঘে প্রায় ৯০cm এবং ইটা অমসৃণ পাথুরে অঞ্চলে চলাফেরা করার সময় দেহের ভারসাম্য রক্ষণ করে। এদের পা দেহের তুলনায় ছোট। সামনের পা দুটো লম্বায় ছোট এবং থাবাটা বর আকৃতির যাতে এরা সহজে বরফের উপর দিয়ে হাটতে পারে। এদের লোমশ পা গুলো তুষারাবৃত অঞ্চলে জুতোর মতো কাজ করে। এদের পিছনের পা কিছুটা লম্বা, তাই খুব সহজেই এরা লাফাতে পারে। প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত এরা লাফাতে পারে।
এরা মাংসাশী প্রকৃতির জীব। সাধারণত নীলচেসারসের , পাহাড়ি আইবেক্স এদের প্রধান খাদ্য হলেও এদের খাদ্য তালিকায় পাখি , খরগোশ জাতীয় ছোট ছোট প্রাণীরাও রয়েছে এবং প্রয়োজনে এরা শরীরের তিনগুন বেশি ওজনের প্রাণীকেও মেরে ফেলতে সক্ষম। সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী একটি জাতীয় উদ্যানে এক বছর একটি তুষার চিতা ৫টি নীলচে ভেড়া, ৯তে খরগোশ, ২৫টি মারমেট, ৫টি গৃহপালিত ছাগল, ১টি ভেড়া, ১৫টি পাখি মেরে খেয়েছিলো।
স্বভাবে লাজুক প্রকৃতির হওয়ায় এরা কম দৃশ্য ম্যান হয়। এমনকি পাহাড়ের অধিবাসীরাও এদের খুব কম সময় দেখতে পান। এরা নিশাচর প্রকৃতির প্রাণী,প্রধানত ভোর বেলা ও বিকেল বেলা ও সন্ধ্যায় এরা বেশি দৃশ্যগোচর হয়। কারণ এই সময়ই তারা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে এদের তেমন ভাবে আর দেখা যায় না। মানুষ জনের আধিক্য এরা একদম পছন্দ করে না। তাই মতের ওপর কম জন বসতি পূর্ণ্য অঞ্চলে এরা ঘোরা ফেরা করে। কখনো কখনো মানউশের উপস্থিতি তে এরা বিরক্ত ও বাধ্য হয়ে নিশাচর হয়ে ওঠে বেশ গভীর রাতে জনশূন্য অঞ্চলে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ায়। এরা সচরাচর মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। তবে প্রজনন কালে এবং শাবক দেড় রক্ষা করার উদ্দেশ্য এরা আক্রমণ প্রবন হয়ে উঠতে পারে। মানুষের হাতে আক্রান্ত হলে এরা আক্রমণ কারীর ক্ষতি করার চেয়ে নিজের আত্ম রক্ষা কেই শ্রেয়া বলে মনে করে। তাই আক্রমণের মুখোমুখি হলে এরা সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরা যেমন 'মিউ' শব্দে ডাকতে পারে, তেমনি আবার কখনো কখনো প্রয়োজনে 'হিস্-হিস্' শব্দও ও করে থাকে। এছাড়া এরা নাসা রন্ধ্র দিয়াও একটি বিশেষ আওয়াজ করে থাকে। তবে এরা গর্জন করতে পারে না। ঈদের নাসা রন্ধ্র টি খুবই প্রসারিত- মূলত পার্বত্য শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যেই এই অভিযোজন।
একক ভাবে বসবাস করায় এরা দুর্রত্ত্বে থেকে বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে নিজের এলাকা নির্দেশ করতে পারে। নিজের উপস্থিতি চিহ্নিত করার জন্যই এরা পিছনের পা দিয়ে মাঠি খুঁড়ে মাটির স্তুপ তৈরি করে প্রয়োজনে এরা এদের মূল-মূত্র কেও সংকেত হিসাবে ব্যবহার করে। অন্নান্ন প্রাণীর মতো নিজের এলাকা নির্দেশ করার জন্য এরাও প্রস্রাব করে। এবং এর গন্ধ ছড়িয়ে দেয়। সাধারণত একে অপরকে খুঁজে পেতে এবং আক্রমণ এরিয়া যাওয়ার জন্য এরা এই সংকেত গুলো ব্যবহার করে থাকে।
শীতের শেষ ভাগ এদের প্রয়োজন কাল। এই সময় এরা বিশেষভাবে ডাকতে পারে। এদের প্রজোযন কাল অল্প সময় এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই এক বছরে এরা দ্বিতীয় প্রয়োজনের জন্য সঙ্গী খোঁজে না। প্রায় ৯০-১০০ দিন স্ত্রী তুষার চিতার গর্ভাবস্থা চলতে থাকে। এই কারণেই মোটামুটি এপ্রিল থেকে জুনের মাঝে মাঝি এরা প্রসব করে। পাহাড়ে সাধারণত পাথরের ফাটলে এদের বাছা গুলো জন্মায়। একবারে এরা একটি থেকে পাঁচটি বাছা প্রসব করে রথাকে। সদ্যোজাত বাছা গুলোর জন্মানোর পর চোখ ফোটে না। তবে দেহ বোরো পশম যুক্ত লোমে ঢাকা থাকে। জন্মানোর পর এক একটি বাছার ওজন ৩২০-৫৬৭ গ্রাসের মধ্যে হয়। জন্মানোর প্রায় ৭ দিন পর এদের চোখ ফোটে এবং ৫ সপ্তাহ পর এরা হাঁটতে শেখে। জনবাবস্থায় শাবকগুলো দেহের চামড়ায় কালো কালো ছোপ থাকে যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাদামি বা হলদেটে রঙ এ পরিণত হয়। ২-৪ মাস বয়স হলে এরা এদের জন্মস্থান ত্যাগ করে। ৪ মাস বয়স পর্যন্ত মা-তুষারচিতা বাচ্ছাদের পরিষ্কার করা ও খাওয়ানোর সমস্ত রকম দায়িত্ব পালন করে। ১৮-২২ মাস পর্যন্ত এরা এদের মায়ের সাথেই থাকে। তবে খাবার জোগাড় করা ও আত্মরক্ষার ব্যাপারে সক্ষম হয়ে উঠলে এরা শিকারের জন্য বাসস্থান থাকে দূরে চলে যায়। এরা প্রায় ২-৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং প্রায় ১৫ - ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচে।
তুষারচিতার সংখা দিন দিন কমে যাওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এদের বসবাসের অঞ্চল কমে যাওয়া এবং মানুষের নানা ধরণের উৎপাত। মানুষের বাসস্থানের প্রয়োজন দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এরা এদের বাসস্থান হারাচ্ছে, ফলে এরা বাধ্য হয়ে মানুষের বাসভূমিতে চলে আসছে এবং গৃহপালিত পশু মেরে ফেলছে। কখনো কখনো এদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। তাই গ্রামবাসীদের হাতে এরা নিস্তার পায়না -মর্মান্তিকভাবে এদের মৃত্যু ঘটে। চাষের পরিমান বেড়ে যাওয়ার জন্য চাষজমির ক্রমাগত বৃদ্ধি তৃণভূমি অঞ্চলের কমে যাওয়ার প্রধান কারণ , যার ফলে অঞ্চলের তৃণভোজী প্রাণী যেমন , বন্য ভেড়া , ছাগল এদের খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে এবং খাদ্যের অভাবে এদের সংখ্যাও ক্রমাগত কমতে থাকছে , যা পরোক্ষভাবে তুষারচিতার অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও ঐতিহ্যগত প্রথা মেনে এদের দেহের হাড়সহ অন্যানো অংশ ভিভিন্ন পোকার চীনা ওষুধ তৈরির কাজে লাগানোর অপচেষ্টাও এদের চরম বিপদ ডেকে আনছে। তাই, এদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার একমাত্র কারণ হলো মানুষ। আইনে বন্য প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও তুষারচিতা নিধন বন্ধ হয়নি , নির্বিচারে চোরাশিকারিদের হাতে এদের হত্যা চলছেই। সুন্দর লোমে ঢাকা চামড়ার জন্যও এদের মানুষের হাতে মরতে হয়। এদের চামড়ার বাজারদর অস্বাভাবিক বেশি হওয়ায় চোরাশিকারিদের মধ্যে এদের চামড়া সংগ্রহের উদ্দেশ্য এখনো তুষারচিতা নিধন চলছে। তাই ক্রমশ এরা বিপন্ন প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে এবং হয়তো একদিন পৃথিবী থেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আগেই বলা হয়েছে যে , তুষারচিতা প্রজাতিটি খুবই কম হওয়ায় এদের বর্তমান অবস্থা সংকান্ত গবেষণা করা খুবই কঠিন হয়ে উঠেছে , আর এই কারণেই এদের সংরক্ষণ করা ততটাই সমস্যাজনক। তবুও পারিশেস এ একথাই বলতে পারি , নির্বিচার অযৌক্তিক কারণে তুষারচিতা নিধন বন্ধ হলে এবং নিযন্ত্রিত পরিবেশদের প্রজননের বিগ্ন না-ঘটলে অন্যান্য প্রাণীদের মতো এরাও বেঁচে থাকতে পারবে। সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী দার্জিলিং চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গুত্তম থেকে কালিংপং যাওয়ার পথে তিনমাইল এলাকায়তাপকেদারার তুষারচিতা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি অভয়ারণ্য তৈরি হতে চলেছে। এশিয়ায় এই প্রথম কৃত্রিমভাবে শিকার ধরা শেখানোর জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য বন দফতর। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে যাতে এরা টিকে থাকতে পারে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশবিস্তার করতে পারে , তার জন্যই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শিকার পদ্ধতি শিখে নেওয়ার পর এদের ছেড়ে দেওয়া হবে সতিকরের জঙ্গলে।
হাজার হাজার বছর ধরে চরম দুর্গম ও বিপদসঙ্কুল অঞ্চল আ বিচরণ করা সত্বেও এদের কখনো বিপদের মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু , শুধুমাত্র মানুষের সচেতনতার অভাবে এবং সামান্য কিছু শখ মেটানোর উদ্দেশ্যে আজ তুষারচিতা সেই বিপদর সামনে। এদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলের সর্বপ্রথম স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র হত্যা নিষিদ্ধকরণ করলেই প্রাণী সংরক্ষণ সম্ভব নয় , তাকে সঠিক পথে বাস্তবায়িত করাই আমাদের কর্তব্য। আমরাই পারি প্রকৃতিকে তার সম্পদ ফিরিয়ে দিতে। এই সমস্ত প্রচেষ্টার মূল লক্ষ হলো, প্রকৃতিতে জীববৈচিত্র টিকিয়ে রাখা। তাই, মানুষকে পৃকৃতি সম্পর্কে সচেতন করতে না-পারলে, তারা ক্রমশ জীবজগৎ সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়বে। যার পরিণতি শুধুমাত্র তুষারচিতার বিলুপ্তিই নয়, সমগ্র জীবজগৎও ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এরকম আরো আর্টিকেল পড়ার জন্য ফলো করুন আমাদের ব্লগার পেজ। ফ্রি তে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube চ্যানেল.
No comments:
Post a Comment